শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:১০ অপরাহ্ন
রাহাদ সুমন,বিশেষ প্রতিনিধি॥ বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার উদয়কাঠি ইউনিয়নের শেরেবাংলা বাজারে ধারাবাহিক ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ৭টি দোকান পুড়ে অর্ধকোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে। বাজারের পাহাড়াদার সূত্রে জানা গেছে, ২৫ জুলাই বুধবার দিবাগত রাত দেড়টার সময় শেরে বাংলা বাজারে প্রায় দুঘন্টার অগ্নিকান্ডে ৬টি দোকান সম্পূর্ণ ও ১টি মিষ্টির দোকান’র আংশিক পুড়ে যায়। অগ্নিকান্ডে কাপড়ের দোকানী মো. রাসেলের ১০ লাখ, মুদি দোকানী মনির হোসেনের ৫ লাখ, আঃ মালেক আকনের ৫ লাখ, সুলতান হোসেন বেপারীর ৫ লাখ, ফার্মাসী ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলামের ৫ লাখ, কম্পিউটার ব্যবসায়ী মো. শরিফের ২ লাখ ও মিষ্টি দোকানী দিলিপের ১ লাখ টাকার মালামাল এবং ৭টি দোকান ঘর পুড়ে প্রায় অর্ধকোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়। এদিকে সরেজমিনে ওই এলাকায় তথ্য সংগ্রহের সময় স্থানীয় অনেকেই জানান, মনির হোসেন নামের মুদি দোকানী বিদ্যুতের শর্ট-সার্কিট’র ঘটনা ঘটিয়ে লোনের টাকা পরিশোধ না করার ষড়যন্ত্র করেছেন। অবশ্য এ অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবী করেছেন মনির হোসেন।
তবে পাহাড়াদার’রা জানান যে রাতে আগুন লেগেছে ওই রাতে মনির হোসেন বাজার বন্ধ হবার পড়েও অনেক সময় পর্যন্ত তার দোকানেই অবস্থান করছিল। বাজারের পাহাড়াদার ও স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বুধবার রাত অনুমান দেড়টার সময় উপজেলার শেরেবাংলা বাজারে মনির হোসেনের মুদি দোকানে বিদ্যুতের শর্ট-সার্কিটের মাধ্যমে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয়। প্রথমে পাহাড়াদার মো. শহীদ ওই দোকানে আগুন জলতে দেখে ডাক-চিৎকার দিলে বাজারের অপর দোকানীরা এগিয়ে এসে পাশ্ববর্তী খাল’র পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। এর মধ্যে বানারীপাড়া উপজেলা ফায়ার সার্ভিসকেও খবর দেয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস’র টিমলিডার মো. আলতাফ হোসেন তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে যাবার জন্য বন্দরবাজার’র ফেরীঘাটে আসেন।
তবে ফেরীর চালক মো. নান্নু উপস্থিত না থাকায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি সন্ধ্যা নদী পাড় হতে পারেনি। ফেরীর চালক মো. নান্নুর কাছে কর্মস্থলে না থাকার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি ছুটি নিয়ে না নিজের ইচ্ছায় বাড়িতে গিয়েছিলেন তার কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে এরই মধ্যে ওই দোকানগুলো পুড়ে ভস্মিভূত হয়ে যায়। জানা গেছে, মনির হোসেন সম্প্রতি বানারীপাড়া ব্র্যাক ব্যাংক শাখা থেকে মাসিক কিস্তিতে ৩ লাখ টাকা ও বাইশারী শাখা দিয়ে সাপ্তাহিক কিস্তিতে ১ লাখ টাকা লোন উত্তোলন করেছেন। তবে ওই লোনের টাকা তার যাতে পরিশোধ করতে না হয়, সে জন্য সে নিজের দোকানে বিদ্যুতের শর্টসার্কিট’র ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারেন বলে স্থানীয় কেউ কেউ ধারণা করছেন। অপরদিকে বানারীপাড়া ব্রাক ব্যাংকে কর্মরত কেউ কেউ যারা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন, তারাও মনিরের পক্ষে সংবাদকর্মীদের লিখতে বলায় বিষয়টি নিয়ে এক প্রকার ধু¤্রজালের সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, অগ্নিকান্ডের ঘটনায় কেউ যদি বাদী হয়ে মামলা করেন, তাহলে ওই মামলার বিবাদীর বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। অগ্নিকান্ডের খবর শুনে বুধবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম, বানারীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো.খলিলুর রহমান, উপজেলা ত্রাণ ও পুণর্বাসন কর্মকর্তা (পিআইও) অয়ন সাহা, উদয়কাঠী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. শাহ আলম মিঞা,মো. মামুন-উর-রশিদ স্বপন,বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাকির হোসেন প্রমূখ। স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস ক্ষতিগ্রস্ত দোকানীদের নগদ ১০ হাজার টাকা ও ৩০ কেজি করে চালসহ সরকারী ভাবে ত্রাণের ঢেউটিন দেয়ার ঘোষনা দেন। প্রসঙ্গত এর আগেও কয়েকবার ওই বাজারে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে।
Leave a Reply